বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির অসংখ্য অফার এবং বিজ্ঞাপনের কারণে বাড়ি না হোক, অন্তত একটা ফ্ল্যাটের স্বপ্ন দেখেন না, এমন লোক কমই আছে। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে এখন ফ্ল্যাটের ব্যবসা জমজমাট তবে প্রথম অ্যাপার্টমেন্টটি কেনা আপনার জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। ফ্ল্যাট কেনার আগে আপনাকে শুধু টাকা নয়; আরও অনেক কিছুর দিকে নজর দিতে হবে। যেমন ফ্ল্যাট কেনার আগে নিজের বাজেট, কোন এলাকায় কিনবেন, ঋণ পাবেন কি না, ফ্ল্যাটের আয়তন ও নির্মাণসামগ্রী কেমন এবং কর কত দিতে হবে, এসব ভাবতে হবে। এরপর সিদ্ধান্ত নিবেন, কেমন ফ্ল্যাট কিনবেন।
ফ্ল্যাটের স্বপ্ন খুব তাড়াতাড়ি দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠতে পারে যদি খুব সাবধানতার সাথে এবং সুক্ষভাবে বিচার বিবেচনা করে ফ্ল্যাট নির্বাচন না করা হয়। আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারি কথাটি হয়তো অনেকেই মেনে চলেন তবে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে দর্শন ও গুনের সামঞ্জস্যতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই আপনার জন্য সঠিক ফ্ল্যাটটি খুঁজে পেতে নিম্নে বর্ণিত কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় আপনাকে বিবেচনা করতে হবে।
বাজেট বিবেচনা
সবার আগে আপনার বাজেট নির্ধারণ করুন। ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় এবং প্রাথমিক সিদ্ধান্তই হলো আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করতে চান এবং কিভাবে আপনি তা সরবরাহ করবেন। আপনার ব্যাংক লোন প্রয়োজন হলে বিভিন্ন ব্যাংকের সুদের হার এবং শর্তাবলী যাচাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। ফ্ল্যাট কেনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী খরচ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেয়ার চেষ্টা করুন।
লোকেশন
তারপর আসে লোকেশন, এমন স্থানকে প্রাধান্য দিন যে এলাকায় আপনি অনেক দিন থেকেছেন, আপনার পরিবারের সদস্যদের অফিস ও স্কুল কাছে হয় এবং আপনার আত্মীয়-স্বজন থাকে। আশপাশে ভালো হাসপাতাল আছে কি না, এ বিষয়টিকেও বিবেচনায় প্রাধান্য দিন। মেইন রোডের
পাশে ফ্ল্যাট কিনবেন না,শব্দে শান্তিমতো ঘুমাতে পারবেন না। বিল্ডিংয়ের খুব কাছে স্কুল,ফ্যাক্টরি, বাজার বা মার্কেট থাকলে সেখানেও ফ্ল্যাট কেনা থেকে বিরত থাকুন এবং সরু গলিতেও ফ্ল্যাট কিনবেন না, কারণ এসব জায়গায় ইমার্জেন্সিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও অ্যাম্বুল্যান্স প্রবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে। যতই সুন্দর ও সজ্জিত ফ্ল্যাট হোক না কেন, যদি এলাকায় পানি, ইলেক্ট্রিসিটি ও গ্যাসের সমস্যা বিদ্যমান থাকে, তবে পরবর্তীতে আপনাকে প্রচুর ভোগান্তি পোহাতে হবে। তাই এলাকা নির্বাচনে প্রয়োজনীয় সকল ইউটিলিটির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করুন।
পছন্দকৃত ডেভেলপার কোম্পানি/প্রজেক্ট
বিল্ডিং বা প্রকল্প পছন্দের পর, প্রকল্পটির জমির দলিল সঠিক কি না, তা ভালো করে যাচাই করে নিন। যে কোম্পানির কাছ থেকে ফ্ল্যাট কিনছেন সেই প্রতিষ্ঠানের সরকারি অনুমোদন আছে কি না, রাজউক কর্তৃক প্রজেক্টটির অনুমোদিত প্ল্যান আছে কি না এবং কোম্পানিটি রিহ্যাবের সদস্য কি না তা জানুন। ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়সংক্রান্ত সব শর্ত ভালো করে বুঝে ও দেখে নিন।
পার্কিং
নিজস্ব ট্রান্সপোর্ট থাকুক বা না থাকুক, পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই এমন ফ্ল্যাট না কেনাই ভালো। কারণ ভবিষ্যতে গাড়ি কিনলে সেটা রাখার জন্য বিড়ম্বনা পোহাতে হবে। আবাসিক সোসাইটিতে যদিও ফ্ল্যাট কিনলে বেশিরভাগ সময় পার্কিং সুবিধা চুক্তির অংশ হিসেবেই আসে।
বিল্ডিং -এর কাঁচামাল ও নির্মাণের গুণগত মান
সব থেকে জরুরি যে নিরীক্ষা তা হলো, যে বিল্ডিংয়ের ফ্লাট কিনতে যাচ্ছেন তার নির্মাণে ব্যবহৃত কাঁচামাল ও নির্মাণ প্রক্রিয়ার গুণগত মান যাচাই। এ সিদ্ধান্তটি খুব সাবধানতার সাথে নিবেন, কারণ পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। কোম্পানিটির পুরোনো প্রজেক্টস গুলো দেখুন, পুরোনো ক্রেতাদের সাথে কথা বলুন, এবং তারা সমস্যা হলে কত দ্রুত সমাধান পেয়েছিলেন এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা অর্জন করুন। পুরোনো প্রজেক্ট গুলোয় নির্মাণ পরবর্তীতে কোনো গাঠনিক ত্রুটি হয়েছিল কিনা তাও জেনে নিন। আপনার বিনিয়োগ সঠিক কোম্পানি ও প্রজেক্টে নিশ্চিত করতে, এসকল বিষয় জেনে নেয়া অপরিহার্য।
গৃহশৈলী বা ইন্টেরিয়র
ফ্ল্যাট কেনার আগে কেমন গৃহশৈলী বা ইন্টেরিয়র ডিজাইন আপনি চান, তা ঠিক করে নিন। ফ্ল্যাট মানে তো শুধু বেডরুম, ড্রয়িং রুম, বারান্দা নয়। ফ্ল্যাটের নন্দনশৈলীও এখন বড় বিষয়। একটু সবুজের সমারোহ, একটু গৃহশৈলী ফ্ল্যাটে থাকতে তা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া ফ্ল্যাটের ভেতরের অংশে কী ধরনের টাইলস, পানির কল, দরজা-জানালার মান কেমন হবে তাও পছন্দ করে নিন । এ ছাড়া একই কমপ্লেক্সে অনেক ফ্ল্যাট থাকলে সেখানে ব্যায়ামাগার, হাঁটার জায়গা আছে কি না তা দেখে নিবেন।
চুক্তিপত্র
চুক্তিপত্রে স্বচ্ছতা দাবি করুন, তাতে কীভাবে ফ্ল্যাট কিনছেন, ভবন নির্মাণে যাবতীয় উপকরণ এর বর্ণনা, এবং ফ্ল্যাটের অনুমোদিত নকশা বুঝে নিন। আপনি কোন ফ্ল্যাটটি কিনছেন তা চুক্তিতে স্পষ্ট
করে উল্লেখ করুন। আবাসন কোম্পানি আপনার অনুমতি ছাড়া ফ্ল্যাটে কোনো পরিবর্তন করতে পারবে না, এবং শর্তের বাইরে অতিরিক্ত কোনো অর্থ দিতে আপনি বাধ্য নন, তাও চুক্তিতে বুঝে নিন।
রিসেল ভ্যালু
আরও একটি বিশেষ বিবেচ্য বিষয় হলো রিসেল ভ্যালু। যেকোনো পরিস্থিতিতে ও যেকোনো কারণে ফ্ল্যাটটি বিক্রি করার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে পুনঃবিক্রয় মূল্য ভালো পাওয়া যাবে কিনা ফ্ল্যাট কেনার আগে সেটিও মাথায় রাখুন।
পরিশেষে
ফ্ল্যাট কেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ যা খুব সতর্কতার সাথে বিবেচনা এবং পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। বিবেচ্য বিষয়গুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মূল্যায়ন করে এবং যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে, আপনি নিশ্চিত করতে পারেন যে আপনার বিনিয়োগ এবং আপনার স্বপ্নের ফ্ল্যাট সুরক্ষিত থাকবে। আর তাই আপনার ফ্ল্যাট কেনার যাত্রায় সকল রকম সহযোগিতা নিয়ে এবং আপনার ভোগান্তিহীন ভাবে ফ্ল্যাট মালিক হবার স্বপ্ন পূরণ করতে ওয়ান স্টপ সল্যুশন হিসেবে সেবা প্রদান করে আসছে ঢাকা প্রপার্টি ডট কম।
ঢাকা প্রপার্টির দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট, আবাসন আইন বিশেষজ্ঞ এবং রিয়েল এস্টেট এর প্রয়োজনীয় সকল বিভাগের জন্য নিবেদিত টিম, আপনার হয়ে প্রপার্টি সন্ধান, প্রপার্টির গঠনগত মান যাচাই, দলিল ও কাগজপত্র যাচাই এবং ফ্ল্যাট ক্রয় বিক্রয়ের যাত্রায় পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা প্রদান করবে। ঢাকা প্রপার্টির লক্ষ্য হল বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট মার্কেটকে সম্পূর্ণরূপে রূপান্তরিত করে সম্পত্তি বা ফ্ল্যাট ক্রয় এবং বিক্রয়ের যাত্রায় সর্বোচ্চ গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করা।
তাই আপনার স্বপ্ন যাত্রা আজই শুরু করুন ঢাকা প্রপার্টির সাথেই।